ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র থেকে আওয়ামী প্রোপাগান্ডিস্ট উপাদানসহ সকল অগণতান্ত্রিক আইন সরানোর আহ্বান জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা।
সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানো এখন যেকোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে জরুরি, বলে মনে করে সংগঠনটি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ডাকসু গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রস্তাবনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
এতে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ্’র সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের ঢাবি শাখা সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা।
রাশা বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে, প্রহসনমূলক সেই নির্বাচন তখনই বিভিন্ন প্রশ্ন ও অভিযোগের মুখে পড়ে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষের ছাত্র সংসদ নির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কারকৃত গঠনতন্ত্রে ঢোকানো হয় নানা অগণতান্ত্রিক উপাদান। ফলাফলস্বরূপ, ডাকসু হয়ে দাঁড়ায় ফ্যাসিবাদী প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর একটি কালচারাল ক্লাব। ২০১৯ সালের নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক- রাজনৈতিক স্পৃহা সৃষ্টি করার বদলে তা ধ্বংস করে ক্লাবকেন্দ্রিক চেতনাকেই প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি আরও নলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ডাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার ও ডাকসু নির্বাচনের দাবি করে আসছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর সৃষ্ট গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষায় এই দাবি বর্তমানে আরও প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে। ডাকসু গঠনতন্ত্র থেকে আওয়ামী প্রোপাগান্ডিস্ট উপাদানসহ সকল অগণতান্ত্রিক আইন সরিয়ে ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানো এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে জরুরি। একইসাথে, ভবিষ্যতের কোনো ফ্যাসিবাদমনষ্ক গোষ্ঠী যাতে গঠনতন্ত্রে কোনো অগণতান্ত্রিক আইনের অনুপ্রবেশ ঘটাতে না পারে সে বাবদও বিশেষ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ঢাবি শাখা ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ডাকসু গঠনতন্ত্রের সকল অগণতান্ত্রিক উপাদান চিহ্নিত করে সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র সংসদ নিশ্চিতের জন্য ‘ডাকসু গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রস্তাবনা’ হিসেবে বেশ কয়েকটি ধারা লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- ধারা ২: ডাকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ধারা ৩: ডাকসুর কার্যক্রম, ধারা ৫(৩): সভাপতির ক্ষমতা, ধারা ৫(ই): স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ধারা ৫(আই, জে): সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক, ধারা ৫(জি): কমনরুম ও কাফেটেরিয়া সম্পাদক পদ, ধারা ৫(ই): পরিবহন সম্পাদক পদ, ধারা ৬(সি) ও ধারা ৮(পি): নির্বাচন, নতুন সম্পাদক পদ সংযোজন, ধারা ৮(এইচ): বুথ এবং ধারা ১৬: গঠনতন্ত্র সংশোধনী।
ধারাগুলোর গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রসঙ্গে নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন, ডাকসু গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রস্তাবনাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অন্যান্য গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা-মতামতের ভিত্তিতে নিদিষ্ট সময়সীমার মধ্যে গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার এবং অতি দ্রুত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এতে অন্যান্য মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি দিলীপ রায়, ঢাকা মহানগরের সভাপতি তৈয়ব ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শখার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ, অর্থ ও দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক আবু মুজাহিদ, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হুসাইন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২৬ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ‘ডাকসু কী এবং কেন?’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেছে এই সংগঠনটি।
মুনতাসির/সাএ
Leave a Comment